মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের কাছে যাওয়ার ইচ্ছে অনেকদিনের। কিছু টাকা জমিয়ে ভাবলাম, ঘুরে আসা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। শ্যামলি বাসের টিকেট কেটে রওনা হলাম। ভাড়া ৩৫০ টাকা (নন এসি) তবে আপনি যদি ট্রেনে যেতে চান, সেক্ষেত্রে আরও লাভ। চাইলে ঢাকা থেকে ডিরেক্ট কুলাউড়া রেল স্টেশনে নামতে পারবেন। ভাড়া ১৮০. (আমার মাঝেমধ্যে এডভেঞ্চার করতে ইচ্ছে হয়। আপনি যদি একা হোন, বা আপনার মতন একেবারেই সল্প মূল্যে ঘোরার মতন বন্ধু পেয়ে গেলে ট্রেনের সামনে কিছু জায়গা থাকে, শ্রমজীবী মানুষরা সেখানে পাটি বিছিয়ে বসে পড়ে। 'ইগো' নামক মহান বস্তুটাকে বিসর্জন দিতে পারলে সেখানে বসে পড়লেই হলো। সেক্ষেত্রে ট্রেনের টিটি ছাড়াও অইসব জায়গায় ভাড়া নেবার জন্যে আলাদা লোক থাকে। তাঁকে ২০/৩০ টাকা ধরিয়ে দিলেই তিনি খুশী মনে চলে যাবেন।)
কুলাউড়া রেল স্টেশন থেকে আপনাকে আসতে হবে কাঁঠালতলী বাজারে। কাঁঠালতলী বাজার বড়লেখা যাওয়ার রাস্তায় পড়বে। সেখানে নামলেই মাধবকুণ্ড মাত্র ৮ কিঃমি। তবে এখানেই বিপত্তি। এত কম দূরত্ব, তবুও ভাড়া আকাশচুম্বী। কাঁঠালতলী বাজার থেকে সিএনজি রিসার্ভ নিলে ২০০/২৫০ এর মতন পড়বে। দাম কষাকষি করে আপনি ১৫০ এ আনতে পারবেন। তবে আপনি যদি একা হোন, বা দু'তিনজন হোন, তাহলে আপনি রিকশা ভাড়া করাটাই সবচেয়ে বেটার হবে। সেক্ষেত্রে ভাড়া ৭০/৮০ টাকা। তার চাইতেও ভালো হয়, আট কিঃমি এর রাস্তা হেঁটে এলে। চারপাশে গ্রামীণ পরিবেশে আপনার হাঁটতে খারাপ লাগবে না।
আমি অবশ্য গিয়েছিলাম হবিগঞ্জে। ঢাকা থেকে হবিগঞ্জ। তারপর হবিগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজার। বাস ভাড়া ৫০ টাকা। মৌলভীবাজার থেকে কুলাউড়া, বাস ভাড়া ৪০ টাকা। যারা মৌলভীবাজারে আছেন, তারা চাইলে কুলাউড়া না এসে সরাসরি বড়লেখার বাসে উঠলে কাঁঠালতলী বাজারে নেমে গেলে আপনার অনেক টাকা বেঁচে যাবে। তা না হলে কুলাউড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে কাঁঠালতলী বাজার পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা করে।
কাঁঠালতলী বাজার থেকে মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক চলে এলেই মাত্র দশ টাকার টিকিট কেটে ঢুকে পড়ুন। চারপাশে হেঁটে বেড়াতে খারাপ লাগবে না। আমি অস্থির হয়ে চারপাশ দ্যাখছি, অথচ জলপ্রপাতের দ্যাখা পাচ্ছি না। যাকেই বলছি, তিনি বলছেন, আরেকটু দূরে। আধা কিলো হাঁটার পরেই জলপ্রপাতের সন্ধান পেলাম। বাহ! কি মনোরম। তবে ছবি তোলার আগে একটা রিকুয়েষ্ট, কিছুক্ষণ বসে বসে জলপ্রপাত দ্যাখে নিন, চোখ বন্ধ করে অনুভব করুন। বাঙলাদেশের অন্যান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কাছে হয়তো মাধবকুণ্ড আহামরি কিছু না। তবে অনুভব করতে পারলে এটাই স্বর্গ! পুলিশ সাধারণত আপনাকে জলপ্রপাতের কাছে ঘেঁষতে দিবে না। কারণ, এখানে নাকি আগে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিলেন! তবে একটু জোরাজোরি করলে যেতে পারবেন। তাছাড়া আমি তাদের কথা না শুনেই সামনে গিয়েছিলাম, এবং অতি অবশ্যই যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করেছি। সাঁতার কাটা মানা, তবে ছবি তুলতে পারবেন। পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে, তারমানে এই না, আপনি জলপ্রপাতের সামনে গেলে আপনাকে কান ধরে টেনে নিয়ে আসবে। পুলিশগুলো ভীষণ ভদ্র।
আগে পাহাড়ে উঠা যেত। এখন মানা! এই আফসোসটা আমার সারাজীবনের!
১০০০ টাকায় আসা যাওয়া হয়ে যাবেঃ
ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার। বাসে করে যেতে ভাড়া লাগবে ৩৫০ টাকা (নন এসি)। বাস স্ট্যান্ড থেকে চৌমুহনী আসতে হবে অটো করে। ভাড়া ৫ টাকা। এখান থেকে বড়লেখাগামী বাস পাবেন। বাস ভাড়া ৫০ টাকা। লোকাল হলেও জোরেই টানে। ১ঃ৩০ মিনিটে পৌঁছাতে পারবেন। আপনি বড়লেখার আগেই কাঁঠালতলী বাজরে নামবেন। এখন হলো ৪০৫ টাকা! তারপর মাধবকুণ্ড ৮ কিলো রাস্তা। পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। বা রিকশা করে ৭০ টাকা। ব্যাস! ১০ টাকা দিয়ে প্রবেশ করলেই কাঙ্ক্ষিত মাধবকুণ্ড! যেতে ৪৮৫, আসতে ৪৮৫! টোটাল ৯৭০! খাবার খরচ সম্পূর্ণ নিজের উপর।
দারুচিনি -নামক এখানে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের গেটের পাশেই। সাত রঙের চা পাওয়া যায়। দাম ৭০ টাকা। আমি প্রথমে বললাম, কাপ কত করে?
তিনি বললেন, প্রতি কাপ ১০ টাকা।
পরে টাকা দিতে গিয়ে শুনি, উনি কাপ না, উনি বলেছেন, প্রতি রঙ দশ টাকা। অর্থাৎ সাত রঙ সত্তুর টাকা! কি একটা অবস্থা! (তবে চা-টা খারাপ না!)
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দ্যাখে মনেমনে ভাবছি, কবে যে নায়াগ্রা ফলসে যাব! ইশশ!
যারা ঘুরতে আসেন, তারা মোটামুটি সবাই পরিবেশ সুন্দর রাখতে চেষ্টা করেন। বাঙলাদেশ আমাদের মা, তাই মায়ের গায়ে ময়লা লাগতে দেয়া কোনও সন্তানের পক্ষেই ঠিক হবে না। টয়লেটের সুব্যবস্থা আছে। তাই চারপাশে গাছপালা দ্যাখে ১০ টাকা বাঁচতে পরিবেশ নোংরা করবেন না। ধন্যবাদ!
©Imran Hossain Emu
0 comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.